প্রাদেশিক নির্বাচন এর পর মুসলিম লীগ ও কৃষক-প্রজা পার্টির সরকার গঠনঃ
প্রাদেশিক নির্বাচন-১৯৩৭: ১৯৩৭ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনের পর মুসলিম লীগ ও কৃষক-প্রজা পার্টি কোয়ালিশন সরকার গঠন করে এবং এ. কে. ফজলুল হক মুখ্যমন্ত্রি নিযুক্ত হন। ফজলুল হকের মন্ত্রিসভা বেশকিছু জনকল্যাণমূলক কাজ সম্পন্ন করেন। ১৯৩৮ সালে বঙ্গীয় কৃষি-খাতক আইন প্রণয়ন করেন এবং ঋণসালিশী বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। হক মন্ত্রিসভা মাদ্রাসা বোর্ড পূর্ণগঠন করেন এবং অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা আইন প্রণয়ন করেন। তাঁর সময়ে নারী শিক্ষা বিস্তারের জন্য ঢাকায় ইডেন গার্লস কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। হক সাহেব চাকুরিতে ৫০ শতাংশ মুসলমানদের জন্য সংরক্ষণ করেন এবং হিন্দুদের প্রাধান্য হ্রাসের জন্য কলকাতা মিউনিসিপ্যালিটি আইন সংশোধন করেন।
দ্বিজাতি তত্ত্বঃ দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রবক্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। দ্বিজাতিতত্ত¡ ঘোষিত হয় ১৯৩৯ সালে ভারতবর্ষ বিভক্তির সময় সংখ্যালঘিষ্ঠ মুসলমানদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ধর্মভিত্তিক ভারতবর্ষ বিভক্তির প্রস্তাবই হল দ্বিজাতিত্ত্ব। এই তত্ত্বের মূলকথা হিন্দু-মুসলিম আলাদা জাতি।
লাহোর প্রস্তাবঃ ২৩ মার্চ, ১৯৪০ লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের জনসভায় শেরে বাঙলা এ. কে. ফজলুল হক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহ নিয়ে ‘যুক্তরাষ্ট্র’ গঠনের প্রস্তাবই ছিল লাহোর প্রস্তাবের মূল বক্তব্য। লাহোর প্রস্তাবে উপমহাদেশের উত্তর পশ্চিমে ও পূর্বে একাধিক রাষ্ট্রের কথা বলা হলেও ১৯৪৬ সালে মি. জিন্নাহ লাহোর প্রস্তাব পরিবর্তন করে পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেন।
ক্রীপস মিশনঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে জয়লাভে ভারতবাসীর সহায়তা লাভের জন্য স্যার স্ট্যামফোর্ড ক্রিপসকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ভারতবর্ষে প্রেরণ করেন। তিনি ভারতের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে যে কয়টি প্রস্তাব করেন, তা ক্রীপস প্রস্তাব নামে পরিচিত।
‘ভারত ছাড়’ প্রস্তাব গ্রহণঃ ১৯৪২ সালের ৮ আগষ্ট জাতীয় কংগ্রেসের বোম্বাই অধিবেশনে ঐতিহাসিক ‘ভারত ছাড়’ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এ প্রস্তাবে বলা হয় যে, ভারতের মঙ্গলের জন্য এবং জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের জন্য ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান অপরিহার্য।
প্রাদেশিক নির্বাচন এ ভারত বিভাগ এ স্বাধীনতা প্রাপ্তি
প্রাদেশিক নির্বাচন এর পর ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ‘ভারত স্বাধীনতা আইন’ পাশ হয়। ১৪ আগস্ট করাচীতে পাকিস্তানের হাতে এবং ১৫ আগস্ট দিলীতে ভারতীয়দের হাতে আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।
প্রাদেশিক নির্বাচন এর পর সংস্কার আন্দোলন
ওয়াহাবী আন্দোলনঃ তার সংস্কার আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল কুসংস্কার ও অনৈসলামিক রীতিনীতি দূর করে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের নির্দেশিত সরল আদর্শে মুসলিম সমাজকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। প্রাদেশিক নির্বাচন এর পর ওয়াহাবী আন্দোলন ছিল এক পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন। ভারতবর্ষে ওয়াহাবী মত ও আদর্শ প্রচারের পথিকৃৎ ছিলেন সৈয়দ আহমদ বেরেলভী।
ফরায়েজী আন্দোলনঃ পূর্ব বঙ্গের মুসলমানদেরকে কুসংস্কারের অন্ধকার থেকে মুক্ত করার জন্য আলোকবর্তিকা হাতে যে সংস্কারক এগিয়ে আসেন তার নাম হাজী শরীয়তউল্লাহ। তিনি চেয়েছিলেন মুসলমানদের মধ্যে দিনে দিনে যেসব অনৈসলামিক রীতিনীতি অনুপ্রবেশ করছে তা দূর করে তাদেরকে ইসলাম ধর্মের মূল অনুশাসনে ফিরিয়ে নেয়া। ফরায়েজী আন্দোলনকে সারা দেশে একটি সুসংবদ্ধ রূপ দেন হাজী শরীয়তউল্লাহর একমাত্র পুত্র দুধু মিয়া। তার আসল নাম মুহসীন উদ্দীন আহমদ।
ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশনঃ সৈয়দ আমীর আলী মুসলমানদের রাজনৈতিক পুনর্জাগরণের চিন্তাধারার বশবর্তী হয়ে ১৮৭৭ সালে কোলকাতায় ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন। ১৮৮৩ সালে এ সমিতি সর্ব ভারতীয় রূপ পরিগ্রহ করলে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় Central National Mohammadan Association.
ব্রাক্ষ সমাজঃ রাজা রামমোহন রায় হিন্দুধর্মের সংস্কারের জন্য যে আন্দোলন শুরু করেন তা থেকে পরে ব্রাক্ষ-সমাজের উৎপত্তি হয়। ১৮২৮ সালে রামমোহন ‘ব্রাক্ষ-সমাজ’ নামে এক নতুন সভা স্থাপন করেন। প্রকৃতপক্ষেে কানো একটি বিশিষ্ট ধর্ম-স¤প্রদায় গঠন করার পরিকল্পনা রামমোহনের ছিল না। ব্রাক্ষসভায় জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল লোকেরই প্রবেশাধিকার ছিল। ব্রাক্ষ সমাজের মূল আদর্শ একেশ্বরবাদ ও অপৌত্তলিকতাবাদ।
ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন ও ডিরোজিওঃ
প্রাচীন ও ক্ষয়িষ্ণু প্রথা তথা ধর্মীয় সংস্কার ও সামাজিক শৃঙ্খল হতে মুক্তির উলেখযোগ্য প্রয়াস হিসেবে ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন বিশেষভাবে উলেখযোগ্য। ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনকে উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের সর্বাপেক্ষা বিতর্কিত অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। নিন্দা ও প্রশংসা দু-ই ইয়ং বেঙ্গলের সদস্যরা পেয়েছিলেন।
রামকৃষ্ণ মিশনঃ ঊনবিংশ শতাব্দীর উলেখযোগ্য সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলন হলো রামকৃষ্ণ মিশন। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ছিলেন এ ধর্ম মতের প্রবক্তা। সকল ধর্মের প্রতি তার শ্রদ্ধা ছিল অপরিসীম এবং তার মতবাদের মূল কথা ছিল ‘যত মত, তত পথ’। রামকৃষ্ণের জীবদ্দশায় তার মতবাদ তেমন প্রসারিত না হলেও তার শিষ্য স্বাশী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণের তিরোধানের পর সমগ্র ভারত এবং ভারতের বাইরেও প্রচার করেন।