বঙ্গ বিভাগ এর পূর্বে ইন্ডিয়া লীগ গঠনঃ
ইন্ডিয়া লীগঃ বঙ্গ বিভাগ এর পূর্বে ইন্ডিয়া লীগ গঠন হয়। ভারতীয় জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবোধ ও রাজনৈতিক চেতনা জাগ্রত করার উদ্দেশ্যে শিশির কুমার ঘোষ, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ বাংলার কয়েকজন বিশিষ্ট নেতা ইন্ডিয়া লীঘ গড়ে তোলেন।
ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশনঃ ১৮৭৬ সালে সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় কর্তৃক ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন বা ভারত সভা স্থাপিত হয়। মধ্যবিত্ত ভিত্তিক এ সংস্থাদের আদর্শ ও লক্ষ্য ছিল দেশে এক শক্তিশালী জনমত গড়ে তোলা, সর্বভারতীয় রাজনৈতিক স্বার্থকে কেন্দ্র করে ভারতবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করা।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসঃ ব্রিটিশদের সাধ্য নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অধিকার আদায়ের আন্দোলন এবং শাসনকার্যে ব্রিটিশদের সহায়তার লক্ষ্যে ১৮৮৫ সালে ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’ গঠিত হয়। ২৮ ডিসেম্বর, ১৮৮৫ সালে বোম্বেতে বাঙালি ব্যরিস্টার উমেশচন্দ্র ব্যানার্জীর সভাপতিত্বে এর প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। মূলত ব্রিটিশদের আগ্রহে শিক্ষিত ভারতীয়দের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে কংগ্রেস গড়ে ওঠে। কংগ্রেসের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এর সভাপতি হবেন ভারতীয় কিন্তু সেক্রেটারি জেনারেল হবেন ব্রিটিশ নাগরিক। প্রতিষ্ঠাকালীন এর সেক্রেটারীর পদ গ্রহণ করেন অবসরপ্রাপ্ত সিভিলিয়ান অ্যালান অষ্টাভিয়ান হিউম। তাঁকে কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতার সম্মান দেয়া হয়।
বঙ্গ বিভাগ, বঙ্গ বিভাগ রদ ও প্রতিক্রিয়াঃ
বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে বাংলা গঠিত ছিল। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর ভারতের বড়লাটি লর্ড কার্জন এক ঘোষণায় বাংলা প্রদেশকে দু’ভাগে বিভক্ত করেন। এ ঘটনা বঙ্গ বিভাগ বা বঙ্গভঙ্গ নামে পরিচিত। বঙ্গভঙ্গ অনুযায়ী বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগ এবং আসাম নিয়ে গঠিত হয় পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ। এ নবগঠিত প্রদেশের রাজধানী হয় ঢাকা। অন্যদিকে পশ্চিম বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত হয় পশ্চিম বাংলা প্রদেশ যার রাজধানী হয় কোলকাতা। মি. বামফিল্ড ফুলারকে নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিযুক্ত করা হয়।
বঙ্গ বিভাগ এর বিরুদ্ধে হিন্দুদের তীব্র আন্দোলনঃ
হিন্দুরা বঙ্গবিভাগের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে এবং বিলেতি দ্রব্য বর্জনের ডাক দেয়। এতে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বাণিজ্যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে ১২ জিসেম্বর ১৯১১ রাজা পঞ্চম জর্জ দিলী দরবারে বঙ্গবিভাগ রদের ঘোষণা দেন। ২০ জানুয়ারী, ১৯১২ তা কার্যকর হয়। বঙ্গবিভাগ রদের পর বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর হন লর্ড কারমাইকেল।
বঙ্গবিভাগ প্রতিক্রিয়ায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেন ‘আমার সোনার বাংলা’ স্বদেশী গান। বঙ্গবিভাগ রদের আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় ডিসেম্বর-১৯০৬ ঢাকার নবাব সলিমূল্লাহ মুসলিম লীগ গঠন করেন। বঙ্গবিভাগ রদের কারণে পূর্ব বাংলায় একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালে।
মুসলিম লীগঃ ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ও গোঁড়া হিন্দুরা যখন বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনা করে তখন বাংলার মুসলমানরা তাদের স্বার্থে কথা বলার মতো কোন রাজনৈতিক দল না থাকায় অসহায় বোধ করে। এ অবস্থায় মুসলমান নেতৃবৃন্দ একটি আলাদা রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তা-ভাবনা শুরু করে। ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় ‘নিখিল ভারত মুসলিম এডুকেশনাল কনফারেন্স’ এ নবাব সলিমূল্লাহ ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সমর্থন করেন হাকিম আজমল খান, জাফর আলী খান ও মুহাম্মদ আলী প্রমুখ মুসলিম নেতৃবৃন্দ। এর ফলে ১৯০৬ সালে ৩১ ডিসেম্বর ঢাকায় মুসলমানদের রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে‘মুসলিম লীগ’ আত্মপ্রকাশ করে। ১৯০৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর করাচীতে মুসলিম লীগের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
ভারত শাসন আইন-১৯১৯: ১৯১৯ সালে মন্টেগু-চেমসফোর্ড ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করেন যার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো প্রাদেশিক স্বায়ত্ত¡শাসন, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। সংসদীয় পদ্ধতি প্রবর্তন দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা, হইকমিশনার পদ সৃষ্টি ইত্যাদি।
ভারত শাসন আইন-১৯৩৫: ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনে ভারতবাসীর আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করা হয়।