বারো ভূঁইয়া কারা ছিলো?
বারো ভূঁইয়া ছিল পাঠান ও হিন্দু জমিদারদের পরিচিতিমূলক শব্দ। বারো ভূঁইয়া কথাটি প্রসিদ্ধি লাভ করলেও বারো ভূঁইয়াদের সংখ্যা বার অপেক্ষা বেশি ছিল এবং তাঁদের কেহ কেহ হিন্দু ছিলেন। বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে সোনারগাঁয়ের ঈসা খাঁ ছিলেন শ্রেষ্ঠ ও শক্তিশালী নরপতি। সম্রাট আকবর সেনাপতি মানসিংহকে বাংলার সুবাদার নিযুক্ত করলেও তিনি ঈসা খাঁকে পরাজিত করতে পারেননি।
বারো ভূঁইয়া দের নামের তালিকা ও অঞ্চল
ঈসা খাঁ, মসনদ-ই-আলীম, মুসা খাঁ খিজিরপুর | ঢাকা |
মহারাজা প্রতাপাদিত্য | খুলনা-যশোর |
চাঁদ রায়, কেদার রায় | বিক্রমপুর, মুন্সীগঞ্জ |
পীতাম্বর রায়, রামচন্দ্র রায় | পুঠিয়া, রাজশাহী |
গণেশ রায়, প্রথম রায় | দিনাজপুর |
মুকুন্দরাম, রঘুনাথ ভূষণা | ফরিদপুর |
কংস নারায়ণ তাহিরপুর | নাটোর |
বারো ভূঁইয়া দের দমন ও সুবাদার আমল
সুবাদার ইসলাম খানঃ মুঘল প্রদেশগুলো সুবা নামে পরিচিত ছিল। সুবার শাসনকর্তাকে বলা হতো সুবাদার। বাংলা ছিল মুঘলদের অন্যতম সুবা। বাংলার বারো ভূঁইয়াদের দমন করে এ প্রদেশে মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা সম্রাট জাহাঙ্গীরের কৃতিত্বপূর্ণ কাজ। আর এ সাফল্যের দাবিদার সুবাদার ইসলাম খান। তিনি ১৬০৮ সালে বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হন। ইসলাম খান মাত্রাপুর ও ডাকচরা দূর্গ হস্তগত করে ঢাকায় প্রবেশ করেন। (১৬১০ সালে)। এ সময় থেকেই ঢাকা হয় বাংলার রাজধানী। সম্রাটের নামানুষারে তিনি এর নাম রাখেন জাহাঙ্গীরনগর।শায়েস্তা খানঃ মীর জুমলার মৃত্যুর পর আওরঙ্গজেব তাঁর মামা শায়েস্তা খানকে বাংলার সুবাদার নিযুক্ত করেন। শায়েস্তা খানের আমলকে বাংলায় স্থাপত্য শিল্পের স্বর্ণযুগ বলা হয়। এ সময়ে স্থাপত্য শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। তিনিমগ জলদস্যুদের তাড়িয়ে চট্টগ্রাম দখল করেন এবং নাম রাখেন ‘ইসলামাবাদ’। ১৬৭৮ সালে ৮৪ বছর বয়সে তিনি বাংলা ত্যাগ করলে প্রথমে ফিদাই খান ও পরে শাহজাদা মুহম্মদ আযম বাংলার সুবাদার হন। শাহজাদা আযম ঢাকায় একটি দুর্গ নির্মাণের পরিকল্পনা করে সীমানা দেয়াল স্থাপন করেন এবং নামকরণ করেন ‘কেল্লা আওরঙ্গবাদ’। এক বছরের মাথায় শাহজাদা আযম বাংলা ত্যাগ করলে শায়েস্তা খান পুনরায় বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হন। তিনি দুর্গের অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন করেন। এ সময় তাঁর কন্যা ‘ইরান দূখত’ (পরী বিবি) মারা গেলে তিনি দুর্গকে অপয়া ভেবে নির্মাণ কাজ স্থগিত করেন।
নবাবী আমলে বাংলাঃ
মুর্শিদকুলী খানঃ তিনি ব্রাক্ষ্মণের গৃহে জন্মগ্রহণ করেন। হাজী শফী নামক এক ব্যক্তি তাঁকে ক্রয় করে নাম দেন মুহম্মদ হাদী। তিনি হলেন বাংলার প্রথম নবাব। তিনি ১৭০২ সালে মুর্শিদকুলি খান উপাধি পান। ১৭১৭ সালে তিনি বাংলার স্থায়ী সুবাদার নিযুক্ত হন এবং বাংরার রাজধানী ঢাকা থেকে মকসুদাবাদে স্থানান্তরিত করে নাম রাখেন ‘মুর্শিদাবাদে’। তাঁর কোন পুত্রসন্তান না থাকায় মৃত্যুর পর জামাতা সুজাউদ্দিন বাংলার নবাব হন।
আলীবর্দী খানঃ তার প্রকৃত নাম মির্জা মুহম্মদ আলী। বাংলার নবাব সরফরাজ খানের অযোগ্যতার সুযোগে তিনি বাংলা দখল করেন। তিনি প্রথম স্বাধীন নবাব। দিল্লীর দুর্বলতার সুযোগে তিনি স্বাধীনভাবে নবাবী পরিচালনা করেন। তিনি মারাঠা বর্গীদের আক্রমণ হতে বাংলার জনগণকে রক্ষা করেন। ১৭৫৬ সালের এপ্রিল মাসে তিনি মারা গেলে তার দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলা বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন।
সিরাজউদ্দৌলাঃ সিরাজউদ্দৌলা ১৭৩৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম যইনুদ্দীন এবং মাতার নাম আমিনা। মাতামহ নবাবের মৃত্যু হলে মাত্র তেইশ বছর বয়সে তিনি সিংহাসন লাভ করেন। ১৭৫৬ সালের জুন মাসে তিনি ইংরেজদের কাসিমবাজার দুর্গ অধিকার করেন। একই মাসে তিনি কলকাতা জয় করে না রাখেন ‘আলীনগর’। ১৭৫৭ সালের ৪ ফেব্র“য়ারি তিনি ইংরেজদের সাথে ‘আলনিগররের সন্ধি’ করেন। দেশী অমাত্য ও নবাব বিরোধীদের ষড়যন্ত্রে এবং মীরজাফরের বিশ্বসঘাতকতায় ১৭৫৭ সলের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে নবাব পরাজিত হন। পলায়নকালে পাটনার পথে রাজমহলের নিকট ধৃত হয়ে মুর্শিদাবাদে নীত হন। ২ জুলাই, ১৭৫৭ মীরজাফরের পুত্র মীরনের নির্দেশে এক সময়ের আশ্রিত মোহাম্মদী বেগের হাতে নিহত হন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। পলাশীর যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলায় ইংরেজ শাসনের ভিত্তি স্থাপিত হয়। একই সাথে বাংলায় মধ্যযুগের শাসনের সমাপ্তি হয়।