বঙ্গভঙ্গ বলতে কি বুঝ
বঙ্গভঙ্গ, ১৯০৫ লর্ড কার্জন (১৮৯৯-১৯০৫) ভাইসরয় থাকাকালীন সময়ে ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর কার্যকর হয়। এটি আধুনিক বাংলার ইতিহাসে অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। বঙ্গভঙ্গের ধারণা কার্জনের স্বকীয় চিন্তা থেকে উদ্ভূত হয় নি। ১৭৬৫ সাল থেকে বিহার ও উড়িষ্যা সমন্বয়ে গঠিত বাংলা ব্রিটিশ ভারতের একটি একক প্রদেশ হিসেবে বেশ বড় আকার ধারণ করেছিল। এর ফলে প্রদেশটির প্রশাসনকার্য পরিচালনা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে এবং এজন্য এটিকে বিভক্ত করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
নতুন প্রদেশটি অভিহিত হবে ‘পূর্ব বাংলা ও আসাম’ নামে, যার রাজধানী হবে ঢাকা এবং অনুষঙ্গী সদর দফতর চট্টগ্রামে। এর আয়তন হবে ১০৬,৫৪০ বর্গ মাইল এবং জনসংখ্যা হবে এক কোটি আশি লক্ষ মুসলমান ও এক কোটি বিশ লক্ষ হিন্দু সমবায়ে মোট তিন কোটি দশ লক্ষ। এর প্রশাসন গঠিত হবে একটি আইন পরিষদ ও দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি রাজস্ব বোর্ড নিয়ে। কলকাতা হাইকোর্টের এক্তিয়ারকে বজায় রাখা হয়। সরকার নির্দেশ করে দেয় যে, নতুন প্রদেশটির স্পষ্টরূপে চিহ্নিত পশ্চিম সীমানা এবং সঠিকভাবে নির্ধারিত ভৌগোলিক, জাতিগত, ভাষাগত ও সামাজিক বৈশিষ্ট্যাবলি থাকবে। নতুন প্রদেশটির সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো যে, এটা এর নিজস্ব চৌহদ্দির মধ্যে এ যাবৎ বাংলার তুচ্ছ ও অবহেলিত প্রতিনিধিত্বমূলক সমপ্রকৃতির মুসলমান জনগণের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিবে। অধিকন্তু, সমগ্র চা শিল্প (দার্জিলিং বাদে) এবং পাট উৎপাদনকারী এলাকার বৃহদংশ একক প্রশাসনের অধীনে নিয়ে আসা হবে। ১৯০৫ সালের ১৯ জুলাই তারিখের একটি সিদ্ধান্তে ভারত সরকার তার চূড়ান্ত সঙ্কল্প ঘোষণা করে এবং ঐ একই বছরের ১৬ অক্টোবর তারিখে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয়।
লে. গভর্নরঃ
বঙ্গভঙ্গকালীন সময় ২ জন লে. গভর্নর নতুন প্রদেশ শাসন করেন।
- স্যার বেম্বফিল্ড ফুলার (১৯০৫ -১৯০৬)
- স্যার ল্যান্সলট হেয়ার (১৯০৬ – ১৯১১)
বঙ্গভঙ্গকালীন ভাইসরয়ঃ
বঙ্গভঙ্গকালীন সময় ৩জন ভাইসরয় ছিলেন। - লর্ড কার্জন (১৮৯৯ – ১৯০৫)
- লর্ড মিন্টো (১৯০৫ – ১৯১০)
- লর্ড চালর্স হার্ডিজ্ঞ (১৯১০ – ১৯১৬)
রবী ঠাকুরঃ
রবীন্দ্র ঠাকুর ১৯০৫ সালে স্বদেশী কবিতা হিসেবে ‘‘আমার সোনার বা্ংলা” রচনা করে। তিনি ৩ টা দেশের জাতীয় সংগীত রচনা করেন। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীংলকা।আমার সোনার বাংলা কবিতাটি বঙ্গভঙ্গ বিরোধী কবিতা।
ক্ষুদিরাম বসুঃ
ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন একজন বিপ্লবী। ক্ষুদিরাম বসু ও তার বন্ধু প্রফুল্ল চাকি মিলে ইংরেজি ম্যাজিস্ট্রেট কিংস র্ফোডকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।ক্ষুদিরাম বসু এক হাতে গুলি ও বোমা নিয়ে কিংস ফোর্ডের গাড়ির উপর হামলা করেন দুভার্গ্যবশত গাড়িতে কিংস ফোর্ড ছিলেন না তখন গাড়িতে ছিলেন একজন ব্যারিস্টারে স্ত্রী ও তার কন্যা মারা যান। ১১ আগষ্ট ১৯০৮ সালে বিহারের মোজাফ্ফরপুরে বিপ্লবী ক্ষুদিরামকে ফাসির দন্ড আদেশ করা হয়। এর কিছুদিন পর ক্ষুদিরামের বন্ধু প্রফুল্ল চাকি আত্মহত্যা করেন।
বঙ্গভঙ্গ রদ/ বাতিলঃ
১২ ডিসেম্বর ১৯১১ সালে রাজা ৫ম জর্জ (অর্থাৎ তিনি ছিলেন ইংল্যান্ডের রাজা) দিল্লীর দরবারে বঙ্গভঙ্গ রদ বা বাতিলের ঘোষণা করেন। তখনকার সময়ে ভাইসরয় ছিলেন লর্ড চালর্স হার্ডিজ্ঞ। ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা ও উকিল ব্যারিস্টাররা আন্দোলন শুরু করেন। অন্যদিকে কবি সাহিত্যিকরা স্বদেশী কবিতা রচনা শুরু করেন যার ফলে বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোসণা করতে বাধ্য হয় ব্রিটিশ সরকার। জানুয়ারি ১৯১২ সালে এই রদ কার্যকর হয়।
বঙ্গভঙ্গ রদের ফলাফলঃ ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
• ১৯১২ সালে ভারতের রাজধানী কলকতা থেকে দিল্লীতে স্থানান্তর করা হয়।
• ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
লর্ড চালর্স হার্ডিজ্ঞ ১৯১২ সালে ঢাকায় আসেন। পাবনার হার্ডিজ্ঞ সেতুর ভিত্তি প্রস্তর করেন লর্ড চালর্স হার্ডিজ্ঞ।
সিলেট অঞ্চলঃ বঙ্গভঙ্গ রদ বা বাতিল ঘোষণা করা হলে সিলেটকে আসামের সঙ্গে রেখে দেই। পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গের অংশকে (অর্থাৎ কলকতা ঐ অংশের সাথে মিলিত করা হয়েছিল )। সিলেটকে আসামের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলে সিলেটে গণভোটের আয়োজন করা হয়। এই গণভোটের মাধ্যমে সিলেটের জনগণ পাকিস্তানের সঙ্গে আসার পক্ষে অবস্থান নিলে সিলেট পূর্বপাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশের এই অংশের সঙ্গে মিলিত হয়।সিলেটকে নিয়ে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। কংগ্রেস ছিলেন সিলেট আসামে যাবে আর মুসলিম লীগ ছিলেন সিলেট পূর্বপাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশে যাবে। ঐ সময় বিভিন্ন মুসল্লি ফতোয়া দিয়েছিলেন। প্রত্যেকটা মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে পূর্বপাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশ এই অংশে থাকবে এই পক্ষে ভোট দেওয়া। ঐ সময় বঙ্গবন্ধু কলকতা থেকেএকদল সহকর্মী সিলেটের নির্বাচন প্রচারোণা জন্য মুসলিম লীগের পক্ষে কাজ করেন। সিলেট এই ভোটে জয়লাভ করে।