মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর কে বিভক্ত করা হয় ১৯৭১ সালের ১২ই জুলাই। পুরো বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টের বিভক্ত করা পর সেক্টরগুলোর কমান্ডারও গঠন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরকে পরিচালনার জন্য সেক্টর কমান্ডার গঠন করা হয় নিচে তা আলোচনা করা হলো।
১ নং সেক্টরঃ চট্টগ্রাম ও পাবর্ত্য চট্টগ্রাম এলাকা ছিল ১ নং মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। ফেনী নদী থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও ফেনী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এই সেক্টর। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের হরিনা ছিল সেক্টর নং ১ এর সদর দপ্তর।
১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার: ১৯৭১ সালের এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের থেকে জুন পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে মেজর জিয়াউর রহমান দায়িত্বরত ছিলেন। জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সেক্টর ১ এর কমান্ডার ছিলেন মেজর রফিকুল ইসলাম। আর ১ নং সেক্টরকে পাঁচটি সাব সেক্টরে বিভক্ত করা হয়েছিল।
২ নং সেক্টর: ঢাকা, নোয়াখালী, ফরিদপুর ও কুমিল্লার অংশবিশেষ ছিল সেক্টর ২ এর অংশ। ঢাকা, কুমিল্লা, আখাউড়া–ভৈরব, নোয়াখালী ও ফরিদপুরের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল সেক্টর ২। ভারতের ত্রিপুরার মেঘালয় অঞ্চলে সেক্টর নং ২ এর সদর দপ্তর অবস্থিত ছিল৷
২নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার: মেজর কেএম খালেদ মোশাররফ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর এটিএম হায়দার এই সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন৷ এই সেক্টরে ৬টি সাব-সেক্টর ছিল।
৩ নং সেক্টর: উত্তরে চূড়ামনকাঠি (শ্রীমঙ্গলের কাছে) থেকে সিলেট এবং দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার সিঙ্গারবিল পর্যন্ত এলাকা নিয়ে গঠিত হয় ৩ নং সেক্টর। হবিগঞ্জ, আখাউড়া–ভৈরব রেললাইন থেকে পূর্ব দিকে কুমিল্লা জেলার অংশবিশেষ এবং কিশোরগঞ্জ ও ঢাকার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল ৩ নং সেক্টর।মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর নং ৩ এর সদর দপ্তর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কলাগাছিয়ায় অবস্থিত ছিল৷
৩নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার: মেজর কেএম শফিউল্লাহ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন । মেজর এএনএম নুরুজ্জামান সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন । সেক্টর নং ৩-এ ৬টি সাব-সেক্টর ছিল।৪ নং সেক্টর: মুক্তিযুদ্ধের মৌলভীবাজার ও সিলেটের পূর্বাংশ সেক্টর ৪ এর অংশ ছিল। মূলত সিলেট জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত হয়েছিল ৪ নং সেক্টর।
৪নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার: মেজর সিআর (চিত্তরঞ্জন) দত্ত এবং ক্যাপ্টেন এ রব ছিলেন সেক্টর নং ৪ এর কমান্ডার। এই সেক্টরের সদর দপ্তর প্রথমে করিমগঞ্জে থাকলেও পরবর্তীতে আসামের মাছিমপুরে স্থানন্তর করা হয়।
৫ নং সেক্টরঃ বৃহত্তর ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী অঞ্চল এবং সিলেট জেলার অংশ বিশেষ নিয়ে গঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের ৫ নং সেক্টর।সেক্টর নং ৫ এর সদর দপ্তর ছিল সুনামগঞ্জ জেলার ছাতকের বাঁশতলায়।
৫নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার: মুক্তিযুদ্ধের এই সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর মীর শওকত আলী । এই সেক্টরকেও ৬টি সাব-সেক্টরে ভাগ করা হয়ছিল।
৬ নং সেক্টরঃ সমগ্র রংপুর জেলা এবং দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমা নিয়ে গঠিত। প্রধানত রংপুর ও দিনাজপুরের ইপিআর বাহিনী নিয়ে এই ৬ নং সেক্টর গঠিত হয়।
৬নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডা্রঃ ইউং কমান্ডার এমকে বাশার সেক্টর নং ৬-এর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন৷ এই সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল বুড়িমারী, পাটগ্রাম। এই ৬ নং সেক্টরে ৫টি সাব-সেক্টর ছিল৷
৭নং সেক্টরঃ রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া এবং দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাংশ নিয়ে গঠিত হয় সেক্টর নং ৭।
৭নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার: মেজর নাজমুল হক, সুবেদার মেজর এ রব ও মেজর কাজী নুরুজ্জামান- এই তিনজন সেক্টর নং ৭ এর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তরঙ্গপুরে ছিল এই সেক্টরের সদর দপ্তর। ৭ নং সেক্টরে ৯ টি সাব সেক্টর ছিল।
৮ নং সেক্টরঃ কুষ্টিয়া, যশোর, দৌলতপুর সাতক্ষীরা সড়ক পর্যন্ত খুলনা জেলা ও ফরিদপুরের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল সেক্টর নং ৮।
৮নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার: এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে মেজর আবু ওসমান চৌধুরী দায়িত্বরত ছিলেন ও আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর এম এ মঞ্জুর। এই সেক্টরে ৭টি সাব-সেক্টর ছিল।
৯নং সেক্টরঃ সুন্দরবন ও বরিশাল বিভাগ সেক্টর ৯ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। পটুয়াখালী, বরিশাল ও খুলনার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল সেক্টর নং ৯।
৯নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার: ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত ৯ নং সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে মেজর এম এ জলিল দায়িত্বরত ছিলেন। এরপর কিছু সময় মেজর জয়নাল আবেদীন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এছাড়াও অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন মেজর এম এ মঞ্জুর। এই সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল ভারতের বসিরহাটের টাকিতে। ৯ নং সেক্টরে ছিল ৩টি সাব-সেক্টর।
১০নং সেক্টরঃ সকল নৌপথ ও সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল ছিল সেক্টর নং ১০-এর অংশ। সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল, নৌ কমান্ডো ও আভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন সেক্টর নং ১০-এর অধীনে ছিল।
১০নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার: ১০ নং সেক্টরের কোনো সাব-সেক্টর ছিল না এবং ছিল না নিয়মিত কোনো সেক্টর কমান্ডার। এই সেক্টরে নৌ কমান্ডোরা যখন যে সেক্টরে মিশনে নিয়োজিত থাকতেন, তখন সে সেক্টরের কমান্ডারের নির্দেশে কাজ করতেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায় এই বাহিনী গঠনের উদ্যোক্তা ছিলেন ফ্রান্সে প্রশিক্ষণরত পাকিস্তান নৌবাহিনীর আট জন বাঙালি নৌ-কর্মকর্তা।
১১নং সেক্টরঃ বৃহত্তর ময়মনসিং বিভাগ ছিল সেক্টর নং ১১-এর অন্তর্ভুক্ত। কিশোরগঞ্জ বাদে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা নিয়ে গঠিত হয়েছিল সেক্টর নং ১১।
১১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার: মেজর এম আবু তাহের এপ্রিল থেকে ৩ই নভেম্বর পর্যন্ত ১১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তারপর এই সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ফ্লাইট লেফট্যান্যান্ট এম হামিদুল্লাহ।১১ নং সেক্টরের সদর দপ্তর হিসেবে ভারতের আসামের মহেন্দ্রগঞ্জকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। এই সেক্টরকে ৭টি সাব-সেক্টর ভাগ করা হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সাব সেক্টর ছিল ৬৪টি। এবং মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের মোট সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ১৭জন। মুজিবনগর ছিল ৮ নং সেক্টরের অধীনে।
যুদ্ধে বড় ভূমিকা ছিল সাধারণ মানুষ ও গেরিলা যোদ্ধাদের, যাদের অনেকেই কোন সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না.
ইতিমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডারদের নাম, সীমানা ও সদর দপ্তর উল্লেখ করা হয়েছে। বোঝার সুবিধার্থে আবার কমান্ডারদের নাম দেওয়া হলোঃ
১নং সেক্টর কমান্ডার: মেজর জিয়াউর রহমান (এপ্রিল- জুন), ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম (জুন-ডিসেম্বর)
২নং সেক্টর কমান্ডার: মেজর খালেদ মোশাররফ (এপ্রিল-অক্টোবর), ক্যাপ্টেন এ টি এম হায়দার (অক্টোবর- ডিসেম্বর)
৩নং সেক্টর কমান্ডার:মেজর কে. এম. শফিউল্লাহ্ (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর), মেজর এ.এন.এম. নুরুজ্জামান (অক্টোবর-ডিসেম্বর)
৪নং সেক্টর কমান্ডার: মেজর সি. আর. দত্ত (মে-ডিসেম্বর)
৫নং সেক্টর কমান্ডার: মেজর মীর শওকত আলী (আগস্ট- ডিসেম্বর)
৬নং সেক্টর কমান্ডার: উইং কমান্ডার এম. কে. বাশার (জুন-ডিসেম্বর)
৭নং সেক্টর কমান্ডার: মেজর খন্দকার নাজমুল হক (এপ্রিল-আগস্ট), মেজর কিউ. এন. জামান (আগস্ট-ডিসেম্বর)
৮নং সেক্টর কমান্ডার: মেজর এম. এ. ওসমান চৌধুরী (এপ্রিল-আগস্ট), মেজর এম. এ. মঞ্জুর (আগস্ট- ডিসেম্বর)
৯নং সেক্টর কমান্ডার: ক্যাপ্টেন এম. এ. জলিল (এপ্রিল-ডিসেম্বর)
১০নং সেক্টরের কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না
১১নং সেক্টর কমান্ডার: মেজর জিয়াউর রহমান(জুন-আগস্ট), মেজর এ. তাহের (আগস্ট-নভেম্বর), ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এম. হামিদুল্লাহ (নভেম্বর-ডিসেম্বর)
Facebook: https://www.facebook.com/super30bangladesh
You Tube: https://www.youtube.com/c/super30bangladesh-BCS-preparation
Instagram: https://www.instagram.com/super30bangladesh/