রাষ্ট্রভাষা ভাষা বাংলা ও পাকিস্তান সরকারের বৈষম্য
ভাষা আন্দোলন সংঘটিত পাকিস্তানী সরকারের বৈষম্যের কারনে। যেসব ক্ষেত্রে বাঙ্গালি বৈষম্যের শিকার নিম্নে তুলে ধরা হলো:
রাজনৈতিক ক্ষেত্রেঃ কেন্দ্রীয় সচিব, গভর্নর জেনারেল, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী সহ বড় পদগুলোতে আসীন প্রায় সবাই ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানী।
প্রশাসনিক ক্ষেত্রেঃ প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্তদের বেশীর ভাগই ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানী।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেঃ পূর্ব পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় পশ্চিম পাকিস্তানের মাথাপিছু আয়ের অর্ধেক ছিল।
সামরিক ক্ষেত্রেঃ সামরিক বাহিনীতে চাকুরী প্রদান, প্রতিরক্ষা ব্যয়, প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর স্থাপন, প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানকে অনেকবেশী প্রাধান্য দেয়া হত।
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেঃ পাকিস্তানের ৫৬.৪ শতাংশ মানুষ বাঙালি হওয়া সত্তে¡ও রাষ্ট্রভাষা ছিলো ঊর্দু।
রাষ্ট্রভাষা ভাষা বাংলা আন্দোলন এর প্রথম-দ্বিতীয়-শেষ পর্যায়
ভাষা আন্দোলন রাষ্ট্রভাষা করার উদ্যোগে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় সর্ব প্রথম ১৯৪৭ সালে অক্টোবর মাসে ‘তমদ্দুন মজলিশের’ উদ্যোগে। ১৯৪৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর ‘তমদ্দুন মজলিশ’ নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়।
১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রূয়ারী গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ অধিবেশনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকে অন্যান্য ভাষার সাথে অন্যতম রাষ্টভাষা হিসেবে ব্যবহার করার দাবি উত্থাপন করেন। লিয়াকত আলী খান, নাজিম উদ্দীন প্রমুখ মুসলিম লীগ নেতা তাঁর প্রস্তাবটির বিরোধিতা করেন। ফলে ১৯৪৮ সালেল ২৬ ফেব্র“য়ারী ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে বাংলা ভাষার সমর্থনে শ্লোগান দিতে থাকে। ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ রাষ্টভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
১৯৫০ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রি লিয়াকত আলী খান ঘোষনা করেন, ‘উর্দুই পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হবে’। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারী খাজা নাজিম উদ্দীনও এক জনসভায় একই ঘোষণা দেন। এতে ছাত্র ও বুদ্ধিজীবি মহলে দারুণ হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ৪ ফেব্রুয়ারী সর্বদলীয় ‘রাষটভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ একটি সভায় ২১ ফেব্রুয়ারী প্রদেশব্যাপী এক সাধরণ ধর্মঘটের এবং ঐ দিন ভাষা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অবস্থা অনুধাবন করে ঢাকায় জেলা ম্যাজিস্টেট ২০ ফেব্র“য়ারী থেকে ৩০ দিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। ২১ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্র-ছাত্রীরা সমবেত হয়। ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ চলাকালে বেলা ৩ টার দিকে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। পুলিশ প্রথমে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে এবং সে গুলিতে বরকত, রফিক, সালাম, জব্বার, শফিউরসহ, মোট ৮ জন শহীদ হন এবং অনেকে হন আহত। এতে সারা পূর্ব বাংলায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
রাষ্ট্রভাষা ভাষা বংলা আন্দোলন এর শহীদবৃন্দ
বাংলা ভাষা আন্দোলন এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যলায়ে মিছিলে শহীদ ভাষা সৈনিকদের নাম নিম্নে দেওয়া হলো:
১. আবদুল জব্বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
২. আবুল বরকত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
৩. শফিউর রহমান তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ক্লাসের ছাত্র এবং হাইকোর্টের কর্মচারী ছিলেন
৪. রফিক উদ্দিন মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের ছাত্র
৫. আবদুস সালাম পিয়ন।
৬. অহিউল্লাহ শিশু শ্রমিক
৭. আবদুল আউয়াল বালক (অনেকের মতে রিক্সা চালক)
৮. অজ্ঞাত বালক অধিকাংশের মতে আখতারুজ্জামান বা আবদুর রহিম