পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র গৃহীত হয় ২৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৬
২৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৬ পাকিস্তানের নতুন শাসনতন্ত্র গৃহীত হয়। ২৩ মার্চ ৫৬ শাসনতন্ত্র কার্যকর হয়। শাসনতন্ত্র অনুযায়ী পাকিস্তানের নামকরণ করা হয় ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান। শাসনতন্ত্রে গভর্নর জেনারেলের পরিবর্তে প্রেসিডেন্টের শাসনবলবৎ করা হয়। এই সংবিধানে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। শেখ মুজিব ব্যতীত জাতীয় পরিষদের সকল সদস্য এ সংবিধানে স্বাক্ষর করেন।
যুক্তফ্রন্ট গঠনঃ ১৯৫৩ সালের ১০ মার্চ প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট প্রাদেশিক আইন পরিষদের মোট ৩০৯টি আসনের মধ্যে এককভাবে ২২৩টি আসন লাভ করে।
১৯৫৫ সালের ১১ আগস্ট কেন্দ্রীয় সরকার গঠন
পূর্ববাংলায় কেন্দ্রের শাসনঃ ১৯৫৪ সালের মে মাসে ৯২-ক ধারা অনুযায়ী পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রীয় শাসন জারি করা হয় এবং মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জাকে পূর্ব বাংলার গভর্নর নিযুক্ত করে পাঠানো হয়। হক সাহেব নিজ বাড়িতে অন্তরীণ হন। ১৯৫৫ সালের ৬ জুন তারিখে ৯২-ক ধারা প্রত্যাহার করা হলে ফজলুল হকের মনোনীত প্রার্থী আবু হোসেন সরকারের নেতৃত্বে নতুন যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। মুসলিম লীগ ও যুক্তফ্রন্ট মিলিতভাবে চৌধুরী মুহম্মদ আলীর নেতৃত্বে ১৯৫৫ সালের ১১ আগস্ট নতুন কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করে।
ইস্কান্দার মির্জাকে অপসারণ ও আইয়ুব খানের কর্তৃত্ব গ্রহণ
আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলঃ ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জাকে অপসারণ করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশের কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি মৌলিক গণতন্ত্র নামে এক অভিনব ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। ১৯৬০ সালে তিনি মৌলিক গণতন্ত্রীদের আস্থামূলক ভোটে পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তানের দ্বিতীয় সংবিধান প্রণয়ন করে। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের চাপে আইয়ুব খান বাধ্য হয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে রাজনীতি থেকে বিদায় নেন।
ছয় দফাঃ ১৯৬৬ সালে ৫-৬ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের লাহোরে বিরোধী দলগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে পাকিস্তান আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ছয়দফা উত্থাপন করেন।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাঃ পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালের জানুয়ারী মাসে শেখ মুজিবকে প্রধান আসামি করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে একটি মামলা দায়ের করে।
এগার দফাঃ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে ১৯৬৯ সালের ৬ জানুয়ারী ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ এগার দফা কর্মসূচী ঘোষণা করে। আওয়ামী লীগের ছয়দফা কর্মসূচী এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত ছিল।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানঃ ১৯৬৯ সালের প্রথম দিকের ধারাবাহিক ঘটনাবলি ১৯৬৯ সালের আন্দোলনকে একটি গণঅভ্যুত্থানে রূপ দেয়। এ আন্দোলনে ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্র“য়ারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সামরিক অফিসার কর্তৃক নিহত হন। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্র“য়ারী আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারী ছাত্ররা শেখ মুজিবসহ আগরতলা মামলার সব আসামিকে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়াদী উদ্যান) এক গণসংবর্ধনা দান করে। ঐদিন তদানীন্তন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমদ জনতার পক্ষ থেকে শেখমুজিবকে ভূষিত করেন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে। ২৫ মার্চ জেনারেল আইয়ুব খান জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করেন। ঐদিনই পাকিস্তানে জারি করা হয় সামরিক শাসন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনঃ ১৯৭০ সালের নিবৃঅচন ছিল পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম সাধারণ নির্বাচন। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ও ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি (সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ) আসন লাভ করে।
৭ মার্চের ভাষনঃ শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দান করেন। তাঁর ভাষণ ছিল ১৮ মিনিটের। তিনি ভাষনে উলেখ করেন- “এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”।
মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকঃ দেশের অচলাবস্থা নিরসনকল্পে ১৬ মার্চ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত মুজিব ইয়াহিয়া বৈঠক হয়। কিন্তু বৈঠক কোন সমঝোতায় পৌছানো সম্ভব হয়নি।
অপারেশন সার্চ লাইটঃ ২৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করেন। ঐদিনই শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয় এবং মধ্যরাতে ঢাকায় ব্যাপক গণহত্যা শুরু হয়। পাকিস্তানিদের এ গণহত্যার সাংকেতিক নাম ছিল ‘অপারেশন সার্চ লাইট’। ঐ দিন রাত ১১ টায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে প্রথম সেনা অভিযান শুরু হয়। আর প্রথম আক্রমণ করা হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
স্বাধীনতার ঘোষণাঃ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তনি হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হওয়ার পূর্বক্ষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণার একটি লিখিত বাণী চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ২৭ মার্চ শেখ মুজিবের পক্ষে মেজর জিয়া উক্ত স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
স্বাধীন বাংলা বেতারঃ পাকবাহিনী ২৫ মার্চের ধম্যরাতে ঢাকা দখল করে নিলে ‘রেডিও পাকিস্তান’ এর ঢাকা কেন্দ্রও তাদের সম্পূর্ণ করতলগত হয়। এ পটভূমিতে চট্টগ্রামে অবস্থানরত পাক সেনাবাহিনী ও ইপিআরের সশস্ত্র বাঙালি সদস্যর বিদ্রোহ ঘোষণা করে চট্টগ্রাম শহর এবং কালুরঘাটে অবস্থিত এর আঞ্চলিক বেতারকেন্দ্রটি দখল করে নেন। এবং এর নাম দেয়া হয় ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতারকেন্দ্র’ এই বেতার কেন্দ্রের পরিচালক ছিলেন শামসুল হুদা চৌধুরী।
মুক্তিফৌজ ও মুক্তিবাহিনী গঠনঃ কর্ণেল এম. আতাউলগনি ওসমানীর নেতৃত্বে ৪ এপ্রিল সিলেটের তেলিয়াপাড়ার চাবাগানে মুক্তিফৌজ গঠন করা হয়। এটি ১৩ হাজার সৈন্য নিয়ে গঠিত হয়, এর মধ্যে সামরিক সৈন্য ৫,০০০ জন। ১১ এপ্রিল, ১৯৭১ মুক্তিফৌজকে মুক্তিবাহিনী নামকরণ করা হয়। মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম. এ. জি. ওসমানী (১২ এপ্রিল ঘোষণা দেয়া হয়)।